অপারেশন তুফানুল আকসা ১: সাধারণ নাগরিক হত্যা নিয়ে কিছু কথা

হিন্দুত্ববাদী মালউন ভারতীয় মিডিয়ার মতো কিছু পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়া অত্যন্ত আফসোস আর দুঃখ জাহির করছে যে, হামাস “বেসামরিক” “নিরীহ” “সাধারণ” নাগরিকদের হত্যা করে ফেলছে। অবশ্য নাইন এলিভেনের মতো এবারের প্রচারের তত বেশি জোর নেই। বিশেষত হামাসের বিপক্ষে এবার ফতোয়া জোগাড় করাটা মনে হয় সহজ হচ্ছে না। নাইন এলিভেনকে যারা “সাধারণ নাগরিক” হত্যার অপরাধে (!!) নাজায়েয বলতো, তারাও অনেকে হামাসের হামলায় খুশি ও সমর্থন প্রকাশ করছে।এক মিডিয়া এক ইয়াহুদি ভদ্র লোকের ফতোয়া (!!) প্রকাশ করেছে দেখলাম।

হামাসের হামলায় নিহত কয়েকটা লাশ দেখিয়ে সে অত্যন্ত দুঃখ করছে যে, সাধারণ নির্দোষ (!!) লোকগুলোকে তারা মেরে ফেলছে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি হারাম!ইয়াহুদি ভদ্রলোকের কি সুন্দর ফতোয়া: ইসলামের দৃষ্টিতে এটি হারাম।অথচ এ মালউন ভদ্রলোক নিজেও একটা দখলদার হয়ে থাকবে। তোমরা যে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে তাদের জমি দখল করে বসতি গেড়েছো, তোমাদেরটা খুব হালাল হচ্ছে! তোমাদের সেনারা যে দিবানিশি হামলার পর হামলা করে ফিলিস্তিনিদের রক্তের বন্যা বইয়ে চলেছে, সেটা হালাল হচ্ছে না হারাম হচ্ছে তা বললে না।

সুশীল (!!) মিডিয়াগুলো, যারা আজ খুব দুঃখিত, তারা তো নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যাযজ্ঞের সময় কোনো কষ্ট অনুভব করো না।জো বাইডেন এ হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যায়িত করেছে এবং ইসরাইলিদের জীবন রক্ষার জন্য বিমানসহ রণতরী পাঠিয়ে দিয়েছে!এ হচ্ছে সুশীল (!!) কুফফার মিডিয়ার প্রচারণা এবং ক্রুসেডিয় জায়নবাদি ও মুশরিকি দৃষ্টিভঙ্গি। মুসলিমদের শিশু-বৃদ্ধগুলোও সন্ত্রাসী, আর কুফফারদের দখলদার আগ্রাসী জোয়ানগুলোও নিরীহ।দুঃখের বিষয় হচ্ছে: শুধু মডারেট শ্রেণীই নয়, রক্ষণশীল দ্বীনদার শ্রেণীর অনেক মুসলিমও এ ধরনের চিন্তাধারায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।

অথচ সামরিক বেসামরিকের এই বিভক্তি একটি ধোঁকা বৈ কিছু নয়। না শরীয়তে এর কোনো অস্তিত্ব আছে, না বাস্তব জগতে এর কোনো বিবেচনা আছে।@ ইয়াহুদি বিমানগুলো গাজায় কাদের হত্যা করছে?@ মিয়ানমারে বৌদ্ধ মগরা কাদের দেশান্তর করেছে?@ কাশ্মির ভারতে মালউন হিন্দুরা কাদের হত্যা করছে?@ আফগান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়ামানে আমেরিকান ন্যাটো জোট কাদের হত্যা করেছে?যারা এ সামরিক বেসামরিকের থিউরি আমাদের শিখিয়েছে, আদৌ তারা কি এ নীতি বিশ্বাস করে, না এ নীতি মেনে চলে?

কিন্তু আফসোস সেসব মুসলিমের জন্য, পশ্চিম থেকে উদগত চিন্তা আর ‍বুলিগুলোকে যারা শরীয়তের আলোকে যাচাই না করে বরং স্বয়ং সেগুলোকেই শরয়ী বলে বিশ্বাস করে বসে।অক্ষম নয়, পুরুষ শ্রেণীর এমন প্রতিটি বালেগ সদস্য সামরিকহয়তো আপনার মানতে কষ্ট হচ্ছে যে, একটা ভদ্রলোক, সামরিক বিষয়াশয়ের সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই, হয়তো সে একজন ব্যবসায়ী কিংবা সাধারণ চাকুরিজীবী: সেও সামরিক। সে হত্যাযোগ্য। মুবাহুদ দম। হালালুদ দম। তাকে কতল করা জায়েয। তার গলায় ছুরি চালানো, তার বুকে খঞ্জর বসানো কিংবা বুলেটে তার বুকটা ঝাঁঝরা করে ফেলা জায়েয। যদিও তার হাতে অস্ত্র নেই। তার ট্রেনিং নেই। সে যুদ্ধের ময়দানে নেই।কিন্তু আপনিই বলুন: গো রক্ষার নামে প্রতিদিন যেসব সুশীল (!!) হিন্দু মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যা করছে, কিংবা তামাশা দেখছে: আপনি তাদের নিরীহ বেসামরিক বলবেন? তাদের রক্ত মাছুম? তাদের হত্যা করা যাবে না?

কিংবা যেসব ইয়াহুদি ভদ্রলোক (!!) সুদূর আফ্রিকা কিংবা ইউরোপ ছেড়ে এই অসহায় ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে এসে বসতি গেড়ে তাদের উৎখাত করে বাস্তুহারা করেছে: তাদের দম মাছুম? তাদের গায়ে হাত তোলা যাবে না? তারা বেসামরিক? নিরীহ? নিরপরাধ?কিংবা যেসব স্থানীয় মগ আরাকানি মুসলিমদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে তাদের শেষ আশ্রয়টুকু: আপনি বলবেন তারা নিরীহ? নিরপরাধ?শুধু পেশাদার সেনাদলে ভর্তি নেই বলেই তারা সন্ত্রাসী নয়, সাধারণ?

আপনি হয়তো বলবেন: না, আমরা এমন ধরনের ইয়াহুদি কিংবা হিন্দু বৌদ্ধের কথা বলছি না।তাহলে বলবো: এমনটা হলে আপনার সমালোচনার ভাষায় পরিবর্তন আনা দরকার ছিল। আপনার বলার দরকার ছিল: যেসব কাফের মুসলমানদের হত্যা বা নির্যাতনে জড়িত, তারা অপরাধী- যদিও তাদের হাতে অস্ত্র না থাকে বা তারা সামরিক বাহিনির লোক না হয়ে থাকে। তাদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার মুসলিমদের আছে।কিন্তু আপনি তো এমন তমিজটা করছেন না।

আপনি কেন বলছেন না: যেসব মুসলিম কোনো না কোনোভাবে নির্যাতিত, নির্যাতনকারীদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার তাদের আছে?তাহলে কি বলতে হবে: আপনি আসলে শরয়ী দৃষ্টিকোণ কিংবা বাস্তবতার আলোকে কথা বলছেন না, বরং গা বাঁচিয়ে চলার মতো বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন?আপনি তো গতকাল নাইন এলিভেনের বিরোধিতা করেছিলেন, তাহলে আজ হামাসের প্রশংসা করছেন কেন? হামাস তো সেই সাধারণ সুশীলদেরই (!!) হত্যা করেছে, যে অপরাধে আপনি নাইন এলিভেনের বিরোধী? না’কি বিষয়টা এমন হয়ে পড়েছে যে, আজ স্রোতের গতি এদিকে তাই আপনিও এদিকে, আর গতকাল স্রোত ছিল উল্টো তাই আপনি ছিলেন উল্টো? বিষয়টা ভাবার মতো। শরীয়তের মানদণ্ডে বিবেচনা না করে যখন যেটার চলন, আমিও সেটারই পক্ষে গেয়ে যাচ্ছি কি’না?কেন প্রতিটি বালেগ পুরুষ সদস্য হত্যাযোগ্য অপরাধী?

আচ্ছা আপনি একবার ভারতকে এভাবে ভাবুন যে, এখানে নারী শিশু বৃদ্ধ বা সাধারণ শ্রেণীর কোনো হিন্দু নাই, শুধু সৈনিক শ্রেণীটি আছে। আপনি ভাবুন: তাহলে গোটা ভারতে সব সৈন্য মিলে সংখ্যাটা কত দাঁড়াবে? তারা যদি গোটা ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে, তাহলে ভারতের একেকটা মহল্লাতে একটা করেও কি সৈন্য ভাগে পড়বে? তখন তাদের পক্ষে কি সম্ভব হতো মুসলিমদের নির্যাতন করা? গো হত্যার অভিযোগে হত্যা করা? জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা?

বরং এসকল সৈন্য কি নিজেদের জান রক্ষা পর্যন্ত করতে পারতো? নির্যাতন তো দূরের কথা।তারা যদি নিজেদের কাপড় নিজেরা বানায়, নিজেদের খাদ্য-খাবার নিজেরা চাষ করে এবং নিজেরা প্রস্তুত করে, নিজেদের অর্থ নিজেরা যোগায়, নিজেদের অস্ত্র নিজেরা তৈয়ার করে, নিজেদের গাড়ি নিজেরা বানায়: তাহলে এ শ্রেণীটির জীবন শুধু নিজেদের জীবন ধারণের পেছনেই শেষ হয়ে যেতো, এক সেকেন্ড সময়ও তারা যুদ্ধের জন্য আর মুসলিম নির্যাতনের জন্য পেতো না।

কিন্তু আপনি যাদের নিরীহ বলছেন, সেই নিরীহগুলো তাদের অর্থ যোগাচ্ছে। তাদের পোশাক যোগাচ্ছে। তাদের রসদ যোগাচ্ছে। তাদের অস্ত্র যোগাচ্ছে। ছাউনিগুলো নির্মাণ করে দিচ্ছে। রাস্তাগুলো বানিয়ে দিচ্ছে। গাড়িগুলো প্রস্তুত করে দিচ্ছে। তাদের পরিবারের দায়ভার নিজেদের কাঁধে বহন করে বিশাল অঙ্কের বেতন তাদের জন্য মাসে মাসে যুগিয়ে যাচ্ছে।এই সর্ব প্রকারের ব্যাকসাপোর্টের পর এবার এবং কেবল এবারই সম্ভব হচ্ছে এই সামরিক শ্রেণীটির জন্য যে, তারা বিমানগুলো উড়িয়ে গাজায় নিয়ে যাচ্ছে। বুলডোজারগুলো দিয়ে ফিলিস্তিনিদের বাড়িগুলো গুড়িয়ে দিচ্ছে। মায়ের সামনে ছেলেকে গুলী করছে। বাবার সামনে মেয়েকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। যদি এই ব্যাকসাপোর্ট না থাকতো, মসজিদে আকসার প্রান্তর থেকে একটা ইয়াহুদি সৈন্যও জ্যান্ত ফিরে যেতে পারতো না।

কিন্তু আপনার বিবেক কত উদার: পেছনে থাকা যে লোকগুলো সব প্রস্তুত করে অস্ত্র হাতে শিকারের জন্য এদের পাঠিয়ে দিলো তারা নির্দোষই রয়ে গেলো, সুশীলই রয়ে গেলে, মাছুমুদ দমই রয়ে গেলো।কোনো সমাজেই শুধু সামরিকরা চলতে পারবে না- যদি ব্যাকসাপোর্ট না থাকে। এজন্য এ ‍উভয় শ্রেণীই অপরাধী। এরপরও আল্লাহ তাআলা রহম করে নারীদের হত্যা না করে বন্দী করতে বলেছেন। এটাই অনেক বেশি। মুসলিমদের দাসী হয়ে প্রাণটা ভিক্ষা পেল।

আপনি যদি আগে বেড়ে ব্যাকসাপোর্টদাতা গোটা এ অপরাধী শ্রেণীটিকে মাছুমুদ দম বানিয়ে ফেলেন, তাহলে আপনি কুরআন, সুন্নাহ এবং ইজমায়ে ‍উম্মতের খেলাফ করলেন এবং মুসলিমদের রক্তের সাথে অনেক বড় গাদ্দারি এবং মুসলিম উম্মাহর প্রতি অনেক বড় জুলুম করলেন। শত্রুকে বানিয়ে দিলেন মাছুমুদ দম, আর মুজাহিদকে বানিয়ে দিলেন সন্ত্রাসী, শহীদকে বানিয়ে দিলেন জাহান্নামী। কত বড় অপরাধ আপনি করেছেন ভেবে দেখেছেন কি? আবার একটু ভাবুন নতুন করে। জায়নিস্ট স্কলারদের থেকে দ্বীন নিবেন না, দ্বীন কুরআন সুন্নাহ, সালাফে সালেহীন এবং আইম্মায়ে মুজতাহিদিন থেকে নিন।

মূলঃ ইলম ও জিহাদ ভাই

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

Website Powered by WordPress.com.

Up ↑

Design a site like this with WordPress.com
শুরু করুন