দ্বীন প্রতিষ্ঠার যেকোন কাজই কি জিহাদ?

কোন কোন বন্ধুকে বলতে শোনা যায় ই’লায়ে কালিমাতুল্লাহ, দ্বীন প্রতিষ্ঠা বা দ্বীনের প্রচার প্রসারের নিমিত্ত যে কোন কর্মপ্রচেষ্টাই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। বলা বাহুল্য “জিহাদ” আভিধানিক অর্থে শরীয়ত সম্মত সকল দ্বীনি প্রচেষ্টাকেই বুঝায় এবং শরয়ী নুসূসমূহের(কুরআন হাদীসের ভাষা) কোথাও কোথাও এই শব্দটি জিহাদ ছাড়া অন্যান্য দ্বীনি মিহনতের ব্যাপারেও ব্যবহৃত হয়েছে।

কিন্তু জিহাদ যা শরীয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা এবং যার অপর নাম “কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ” তা কখনো এই সাধারণ কর্ম প্রচেষ্টার নাম নয় বরং এই অর্থে “জিহাদ” হল , “আল্লাহর কালিমা বুল|ন্দ করার জন্য , ইসলামের হিফাজত ও এর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য , কুফরের শক্তিকে চুরমার করার জন্য এবং এর প্রভাব প্রতিপত্তিকে বিলুপ্ত করার জন্য কাফের মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করা।”

ফিকহের কিতাবসমূহে এই জিহাদের বিধি -বিধানই উল্লেখিত হয়েছে । সীরাত গ্রন্থসমূহে এই জিহাদেরই নববী যুগের ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে। কুরআন হাদীসে জিহাদের ব্যাপারে যে বড় বড় ফযীলতের কথা বলা হয়েছে তা এই জিহাদের ব্যাপারেই বলা হয়েছে এবং এই জিহাদে শাহাদাতের মর্যাদায় বিভূষিত ব্যক্তিই হলেন প্রকৃত “ শহীদ ”।

শরয়ী নুসূস এবং শরয়ী পরিভাষাসমূহের উপর নেহায়েত জুলুম করা হবে যদি আভিধানিক অর্থের অন্যায় সুযোগ নিয়ে পারিভাষিক জিহাদের আহকাম ও এফাযাইল দ্বীনের অন্যান্য মেহনত ও কর্ম প্রচেষ্টার ব্যাপারে আরোপ করা হয়। এটা এক ধরনের অর্থগত বিকৃতি সাধন , যা থেকে বেঁচে থাকা ফরয।

তা‘লীম , তাযকিয়া , দাওয়াত ও তাবলীগ , ওয়ায – নসীহত বা দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিকভাবে কোন কর্ম প্রচেষ্টা ( যদি শরয়ী নীতিমালা ও ইসলামী নির্দেশনা মোতাবেক হয় তবে তা আমর বিল মা’রুফ ও নাহী আনিল মুনকারের একটি নতুন পদ্ধতি ) এসবই স্ব স্ব স্থানে কাম্য বরং এসব কর্মপ্রচেষ্টার প্রত্যেকটাই খিদমতে দ্বীনের এক একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ।

এসবের ভিন্ন ফাযাইল , ভিন্ন আহকাম এবং ভিন্ন মাসাইল রয়েছে এবং কোনটিকেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই কিন্তু এসবের কোনটাই এমন নয় যাকে পারিভাষিক জিহাদের অন্তর্ভূক্ত করা যায় এবং যার ব্যাপারে জিহাদের ফাযাইল ও আহকাম আরোপ করা যায় ।

এই বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করা ও মনে রাখা নেহায়েত জরুরী , কেননা আজকাল জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ইসলামের বহু পরিভাষার মধ্যে পূর্ণ বা আংশিক তাহরীফের ( বিকৃতি সাধন ) প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । কেউ তাবলীগের কাজকে “জিহাদ” বলে দিচ্ছেন , কেউ তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধির কাজকে , আবার কেউ রাজনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টা বরং ইলেকশনে অংশগ্রহণ করাকেও জিহাদ বলে দিচ্ছেন। কারো কারো কথা থেকেতো এও বোঝা যায় যে , পাশ্চাত্য রাজনীতির অন্ধ অনুসরণ ও জিহাদের শামিল । আল্লাহর পানাহ !


সূত্র : মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক, “কিতাবুল জিহাদ” বইয়ের ভূমিকা, পৃষ্ঠা : ৩৬-৩৭।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

Website Powered by WordPress.com.

Up ↑

Design a site like this with WordPress.com
শুরু করুন