মুজাহিদ ভাইদের আত্মতৃপ্তি ও সংশোধনের উপায়

প্রশ্ন – আমাদের মাঝে কখনো কখনো এমন মনোভাব আসে কেন যে- “আমি জিহাদ বুঝেছি, আমি অনেক কিছু হয়ে গেছি…?” এর কারণ কি? আর এটি কিভাবে দূর করা যায়?

উত্তর – এর একটি কারণ হল বর্তমান যুগের ট্রেন্ড। বর্তমান যুগে অহমিকা, ঔদ্ধত্য ও প্রদর্শন করার ইচ্ছাকে ভালো গুণ হিসাবে দেখানো হয়। মিডিয়া, কালচার, সোসাইটির মাধ্যমে এই ধরনের আচরনকে উৎসাহিত করা হয়। তুমি কতো আলাদা, তুমি কতো ভালো, তুমি কতো স্পেশাল – এটা সবাইকে জানাও, এতেই তোমার ক্রেডিট। এরকম একটা মেসেজ দেয়া হয়। সামাজিক গণমাধ্যম আত্মমুগ্ধতার এই প্রবনতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
তো আমার মনে হয় আমভাবে এটা পুরো সমাজকে প্রভাবিত করেছে, বিশেষ করে তরুণদের। সুতরাং এইভাবে এই জাহালতটা আগে থেকেই অনেকের মধ্যে থাকে, যেটার পরে ‘ইসলামীকরন” ঘটে এই ভাবে। আমি জিহাদ বুঝেছি – আমি বাকি সবার চেয়ে ভালো। আমি অনেক নেককার। ইত্যাদি।

আরেকটি কারণ মনে হয়েছে, সেটি হল – বাংলাদেশের সমাজের সাধারণ মানুষের মাঝে দ্বীনি ইলমের অনেক ঘাটতি আছে। এটা আকিদা, ফিকহ, ইসলামী ইতিহাস, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী – সবদিক দিয়ে। একজন জিহাদ বুঝা ভাই এসব বিষয়ে আলহামদুলিল্লাহ প্রাথমিক পর্যায়েও অনেক কিছু জানতে পারেন। এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক বিদাত, কুসংস্কার, ভুল ধারণা ইত্যাদিও প্রচলিত আছে। জিহাদ বুজাহ একজন ভাই যখন এরকম মানুষের মাজেহ যায় – সেটা হতে পারে মসজিদে, কিংবা ওয়াজে, কিংবা মাদ্রাসায় কিংবা ক্লাসে – তখন সে বাকিদের তুলনায় নিজের অবস্থা দেখে এক ধরনের গর্ব অনুভব করেন। আমি এদের চেয়ে কতো এগিয়ে। আমি কতো জানি। আমি ফরজ জিহাদ করি, এরা তো ফরজ হবার কথাই জানে না – এরকম বিভিন্ন ধারণা হয়তো তার মধ্যে কাজ করে। এর ফলে তার মধ্যে আলোচ্য মনোভাব তৈরি হয়।

দূর করার উপায় –
এটি দূর করার অনেক উপায় আছে। তাযকিয়াতুন নফসের সাথে রিলেটেড অনেক উপায়ের কতাহ হয়তো ভাইদের আলোচনায় উঠে আসবে। আমি এখানে জিহাদের দিক থেকেই একটি উপায় বলি যেটা আমার কাছে শক্তিশালী মনে হয়েছে।

ইমামের সাথে দিনগুলো – লেকচার সিরিজের একটি পর্বে শায়খ ড আইমান হাফিজাহুল্লাহ একটি ঘটনা বলেছিলেন। শায়খরা খুরাসানে বসে খবর দেখছিলেন, এবং এই সময় টিভিতে ফিলিস্তীনের গাজাতে বিক্ষোভের দৃষ্য দেখানো হচ্ছিল। ঐ মূহুর্তে টিভি পর্দায় একজন ফিলিস্তীনি মহিলাকে দেখানো হচ্ছিল যিনি একটি ব্যানার উচিয়ে রেখেছিলেন যেখানে লেখা ছিল – হে উসামা! আমরা তোমার শপথ শুনেছি, আর আমরা অপেক্ষা করছি তোমার পক্ষ থেকে এই শপথ পূর্ণ হবার।

শায়খ উসামা রাহিমাহুল্লাহ যে বিখ্যাত শপথ করেছিল – উকসিমুবিল্লাহিল আযিম…আমেরিকা ও আমেরিকার অধিবাসীরা শান্তি চিনবে না…
সেই মহিলাটী এই শপথের প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন। শায়খ ড বলেন, আমি দেখলাম এটি শায়খের উপর অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করলো। তার চেহার রং বদলে গেল। কিছুক্ষন পর তিনি উঠে পাশে রুমে গেলেন। তিনি সালাতে দাড়ালেন আর আমরা তার কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম।
সুতরাং শায়খ উসামা বিন লাদেনের রাহিমাহুল্লাহ মতো মুজাদ্দিদ ব্যক্তিও এমন দৃশ্য দেখে আল্লাহ্র সামনে দাঁড়িয়ে কেদেছেন। এর পেছনে ভয় কাজ করেছে, যা করছি তা যথেষ্ট হচ্ছে না, আমরা তো যথেষ্ট করতে পারছি না, হে আল্লাহ আমরা দুর্বল বান্দারা এই গুরুভার ঠিকমতো বহন করতে পারছি না, এরকম অনেক অনুভূতি নিঃসন্দেহে তার মনের মধ্যে কাজ করছিল। চিন্তা করুন ইনি হলেন সেই ব্যক্তি যিনি সমগ্র কুফফার ও তাওয়াগ্বিতের অন্তরকে আল্লাহ্র ইচ্ছায় প্রকম্পিত করেছেন। উম্মাহকে নুসরত করেছেন। উম্মাহর গায়রত আর আযীমত এর দৃষ্টান্ত কুফফারকে দেখিয়েছেন, আল্লাহ্*র ইচ্ছায় তিনি জিহাদের ঝান্ডাকে উচু করেছেন। কিন্তু দিন শেষে আল্লাহর সামনে সেই লোকও মনে করেছেন – আমি কিছুই করতে পারিনি। আমি যথেষ্ট করতে পারিনি।

তাহলে ভাই আমরা আসলে কতোটুকু কী করতে পেরেছি একটু চিন্তা করে দেখুন?

এখনো এই ভূখন্ডে আল্লাহ্*র রাসূল – সাল্লাআল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – আমাদের জানমাল, আমাদের পিতামাতা সন্তানসন্ততি তাঁর জন্য কুরবান হোক – কে নিয়ে কটূক্তি করা হচ্ছে৷
এখনো মুওয়াহিদ ও মুজাহিদদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে৷ এখনো তাঁদের বন্দী করা হচ্ছে। শুধু ভাইদের না মুসলিম বোনদেরও তাগুতের সৈন্যদল বন্দী করছে, নির্যাতন ও অপমান করছে।
আমাদের আরাকানী বোনদের উপর কী হয়েছে আমরা জানি – এখনো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাঁদের উপর কতো ধরনের ঝামেলা যাচ্ছে
হিন্দে গরুর গোশতের প্রশ্ন তুলে মুসলিমের রক্ত ঝড়ানো হচ্ছে৷
তাওহিদে বিশ্বাসীকে বাধ্য করা হচ্ছে তাগুত রামের নামে স্লোগান দিতে
এর সাথে আরো অনেক কিছু যুক্ত করা যায় – উইঘুর, ফিলিস্তীন, বিলাদ আশ-শাম…
আমাদের শত্রু ক্রুসেডার ও জায়নিস্টরা ক্রমাগত আমাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি, প্রশিক্ষন চালিয়ে যাচ্ছে। এক মুহুর্তের জন্য ছাড়া দিচ্ছে না। মনোযোগ সরাচ্ছে না।

তাহলে ভাই বলুন, আমরা কী করেছি? কতোটুকু করেছি আর কতোটুকু বাকি আছে?
আর কিভাবে আমাদের মধ্যে আত্মতৃপ্তি কাজ করে? আমাদের ইমান যদি সালফে সালেহিনের মতো হত, তাহলে হয়তো রাতে আমাদের আরামের ঘুম হতো না, খাবারের লোকমা আমাদের মুখে রুচতো না।

কিন্তু আমাদের অন্তর ব্যাধিগ্রস্থ হওয়াতে আমরা এই বাস্তবতাকে ভুলে থাকতে পারছি।
তাই এধরনের কোন মনোভাব নিজের মধ্যে অনুভব করলে একবার এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে দেখা যেতে পারে।


মূল লেখাঃ মুমতাহিনা ভাই

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

Website Powered by WordPress.com.

Up ↑

Design a site like this with WordPress.com
শুরু করুন