যেভাবে আপনার নামাযে খুশু-খুযু আসবে

খুশু খুযু বা ধ্যান ও মনোযোগ হল, নামাযের রূহ বা প্রাণ। এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা সূরা আল মুমিনীনের শুরুতে সফলতাপ্রাপ্ত মুমিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে একদম শুরুতেই নামাযের খুশু খুযুর কথা উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে আলাদাভাবে নামাযের প্রতি যত্নবান হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। নামাযে খুশু খুজুর ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম এবং পরবর্তী বুযুর্গানে দ্বীনের কত ঘটনাই তো আমরা শুনেছি। আমাদের অনেক ভাই মনে করেন, খুশু খুযুর সাথে নামাজ পড়া আমাদের ভাগ্যে নেই। আমাদের পক্ষে এটা সম্ভব না। অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যত কাজ করতে বলেছেন তা সবই আমাদের সাধ্যের ভিতরে। আমাদের সাধ্যের বাইরে কোনো কাজের নির্দেশ তিনি আমাদেরকে দেন না। আমরা যদি মাত্র দুটি কাজ করতে পারি তাহলে ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে আমাদের নামাযে খুশু-খুযু এসে যাবে। আমরা নিজেরাই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

এক : ধীরস্থিরতা

নামাযের প্রতিটি কাজ ধীরস্থিরভাবে করুন।
ধীরস্থিরভাবে তাকবীর বলুন।
ধীরস্থিরভাবে সানা পড়ুন।
ধীরস্থিরভাবে সূরা পড়ুন।
ধীরস্থিরভাবে রুকু করুন।
ধীরস্থিরভাবে রুকু-সেজদার তাসবীহগুলো পড়ুন।
রুকু থেকে উঠে ধীরস্থিরভাবে সোজা হয়ে দাঁড়ান।
ধীরস্থিরভাবে সেজদা করুন।
দুই সেজদাহর মাঝখানে ধীরস্থিরভাবে বসুন।
মোটকথা, নামাযের প্রতিটি কাজ ধীরস্থিরভাবে সম্পন্ন করুন। পাশাপাশি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া শরীরের কোনও অংগ নড়াচড়া করা (যেমন, শরীর চুলনো, টুপি ঠিক করা ইত্যাদি) থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকুন।

দুই : অর্থের প্রতি মনোযোগ

নামাযে আপনি যা-ই পড়েন তার অর্থের প্রতি মনোযোগ রাখুন। তা সূরা হোক বা তাসবীহ কিংবা দোয়া। আপনি কী পড়ছেন তা যেন আপনি বুঝতে পারেন।*
উদাহরণত, আপনি নামাযে যত বার আল্লাহু আকবার বলবেন, এ কথা খেয়াল করে বলবেন যে, আপনি বলছেন, আল্লাহ সবচেয়ে বড়।

আপনি যদি ধীরে ধীরে ছোট ছোট সূরাগুলোর অর্থ এবং অন্যান্য দোয়াগুলোর অর্থ শিখে নেন। এরপর পড়ার সময় ওগুলোর অর্থের প্রতি খেয়াল রেখে পড়েন তাহলে ইনশাআল্লাহ এটি আপনার পক্ষে সহজ হবে।

এ দুটি কাজ যদি আপনি করতে পারেন তাহলে ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে আপনার নামাযে খুশু-খুযু আসবে। আপনি নিজেই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

এই দুটি কাজ হল নামাযে খুশু খুযু আনয়নের মূল উপায়। এর সাথে সহায়ক আরও কয়েকটি কাজ আছে। তা হল,

এক : আল্লাহ কাছে খুব অনুনয় বিনয়ের সাথে দোয়া করা। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে খুশু খুযুওয়ালা নামাজ দান করুন।
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ*الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ .
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ওই সব লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা তাদের নামাযে খুশু-খুযুর অধিকারী।
কোনো ব্যবসায়ী যখন ব্যবসাতে চরমভাবে লোকসানের সম্মুখীন হতে থাকে তখন সে কীভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করে? ডাক্তাররা যখন কোনো রোগীকে বলে দেয় যে,* আমরা আর পারছি না তখন সে নিজের জীবন রক্ষার জন্য কীভাবে আল্লাহর সামনে কান্নাকাটি করে? একটু ভাবুন তো! আমাদের নামায কি একজন ব্যবসায়ীর ব্যবসার চেয়ে এবং একজন রোগীর জীবনের চেয়ে বহু বহুগুণ মূল্যবান নয়? অতএব আমাদেরকে নামাযের জন্য*কত বেশি অনুনয় বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া করা জরুরি। আমরা যদি আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি তাহলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই আমাদেরকে এমন নামায দান করবেন যা দ্বারা তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন।

দুই : ওযু ও তাহারাত হল নামাজের চাবি। চাবি যত সুন্দর হবে নামায তত সুন্দর হবে। এজন্য ওযু করার সময় আমরা কখনই তাড়াহুড়ো করবো না। ধীর স্থিরভাবে ওযু করবো। ওযুর প্রতিটি সুন্নত, মুস্তাহাব ও আদবের প্রতি লক্ষ্য রেখে ওযু করবো। ওযুর শুরু ও শেষের দোয়াগুলো অবশ্যই পড়বো।

তিন : আমাদের অন্তরে পরনের পোশাকর একটা বিরাট প্রভাব পড়ে। এজন্যই ফুকাহায়ে কেরাম লিখেছেন, যে সকল পোশাক পড়ে কেউ কোথাও বেড়াতে যায় না, কোনো অনুষ্ঠানে যায় না এমন পোশাক পরে নামাজ পড়া মাকরুহ। তেমনি ভাবে ঘরে থাকা কালে সাধারণত যে সব পোষাক পড়া হয় এমন পোশাক পড়েও নামায পড়া মাকরুহ। অতএব আপনি নামাযের জন্য আলাদা এক সেট কাপড় রাখুন। জুমআ ও ঈদের জন্য যেমন আপনার কাছে থাকা সবচেয়ে সুন্দর কাপড়টা পড়েন প্রতি নামাযের জন্য তা-ই করুন।*আপনার কাছে থাকা কাপড়গুলো মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর কাপড়টা পরে নামায আদায় করুন। এটা কেউ কঠিন মনে করতে পারেন। কিন্তু নামাযের যথাযথ আযমত-মহত্ব ও গুরুত্ব আমাদের অন্তরে এসে গেলে কাজটি মোটেই কঠিন মনে হবে না ইনশাআল্লাহ।

খুশু-খুযুর একটি উদাহরণ

আমাদের কেউ যখন কারো সাথে মোবাইলে কথা বলে কিংবা কারো কথা শুনে তখন সে যার সাথে কথা বলছে বা যার কথা শুনছে তার কথার প্রতি কী পরিমাণ মনোযোগী থাকে? তার পূর্ণ মনোযোগ ওই কথার দিকেই থাকে। এ কারণে কখনো কখনো দূর্ঘটনাও ঘটে যায়। কিন্তু এর বিপরীত যখন কেউ ইমো কিংবা হোয়াটসআপে কারো কাছ থেকে আসা ভয়েস রেকর্ড শুনে কিংবা কাউকে পাঠানোর জন্য নিজের ভয়েস রেকর্ড করে তখন কি তার মনোযোগ ওরকম থাকে? নিশ্চয়ই না। আমরা যখন পূর্ণ মনোযোগ সহকারে নামায পড়বো তখন আমাদের অবস্থা এমন হওয়া উচিত, যেন আমরা আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলছি। আমরা বলছি আর তিনি শুনছেন। এটাই হল মূলত নামাযের খুশু খুজু। এটাই হল নামাযের মূল প্রাণ। পক্ষান্তরে আমরা যদি এমন ভাবে নামায পড়ি যেন রেকর্ড করা কিছু কথা শুনিয়ে দিলাম। সুরা ফাতেহাটা শুনিয়ে দিলাম। এরপর আরো একটি সূরা শুনিয়ে দিলাম। কী পড়ছি? কাকে শোনাচ্ছি, সে দিকে কোনো মনোযোগ নেই। ফলে কখনো কখনো আমরা নিজেরাও টের পাই না যে, সূরা ফাতেহার পর কোন সূরাটা পড়লাম। আমাদের এই জাতীয় নামাযগুলো হল প্রাণহীন। মৃত নামায। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এমন নামায থেকে পানাহ দেন এবং এমন ভাবে নামায পড়ার তাওফিক দেন যেভাবে নামায পড়া তিনি পছন্দ করেন।*আমীন


মূলঃ ভাই আবু দুজানাহ

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

Website Powered by WordPress.com.

Up ↑

Design a site like this with WordPress.com
শুরু করুন