জিহাদ নিয়ে মারকাযুদ দাওয়াহ এর বিভ্রান্তির নিরসন

ক’দিন হল দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ‘মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামী’ থেকে সতর্কীকরণের উদ্দেশ্যে ফুজালাদের কাছে দু’টি পারচা পেশ করা হয়েছে। একটি পারচা মাওলানা যোবায়র হোসাইন সাহেব হাফিজাহুল্লাহর কিতাবাদি এবং সেগুলোর ব্যাপারে মারকাযের বারাআত ও অবস্থান পরিষ্কাকরণ সংক্রান্ত, আরেকটির এক বিশেষ অংশ জিহাদ ও মুজাহিদিনের মানহাজ ও কার্যক্রমের নকদ-সমালোচনা সংক্রান্ত। সম্ভবত পারচাগুলোর ব্যাপক প্রচারের অনুমোদন ছিল না, কিন্তু কোন না কোনভাবে সেগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
নেট থেকে সংগ্রীহিত আমার কাছে পারচাদ্বয়ের যে কপি আছে তার একটি তিন পৃষ্ঠার। এটিতে আব্দুল মালেক সাহেবের দস্তখত আছে। তারিখ: ২২ রজব, ১৪৪০ হি.। শিরোনাম (উর্দুতে): ‘এক ওজাহাত’। এটি মাওলানা যোবায়র হোসাইন সাহেব হাফিজাহুল্লাহর কিতাবাদি এবং সেগুলোর ব্যাপারে মারকাযের বারাআত ও অবস্থান পরিষ্কাকরণ সংক্রান্ত।

যোবায়ের হোসাইন সাহেবের কিতাবাদির ব্যাপারে মন্তব্যের সারসংক্ষেপ: [এগুলো মুনকার উসলূব ও ধরণের এবং আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে লেখা কিছু কিতাব, যেগুলোতে কোন প্রকার দলীল-প্রমাণবিহীন গুমরাহিমূলক বিষয়াশয় ছড়ানো হয়েছে। অল্প-স্বল্প ভাল যাও কিছু ছিল, সেগুলোও কিতাবের মুনকার উসলূব ও ধরণ, আক্রমণাত্মক ভঙ্গি এবং হক-বাতিলের সংমিশ্রণসহ আরো বিভিন্ন কারণে ফায়েদাজনক রয়েনি। আহলে ইলমদের দৃষ্টিতে এ ধরণের কিতাব তাহকিকের টেবিলে আসার কোন যোগ্যতা রাখে না।]

মোটামুটি এ হল মন্তব্যের সারকথা। আমরা অস্বীকার করি না যে, যোবায়ের হোসাইন সাহেবের কিছু ভুল হতে পারে। বরং সকলেরই কিছু না কিছু ভুল হতে পারে। তবে ঢালাওভাবে মন্তব্য যা করা হয়েছে, বাস্তবতার নিরিখে তা কতটুকু দুরস্ত, বাস্তবেই কিতাবগুলো মূল্যহীন না’কি অমূল রতন, গুমরাহকারী না’কি হিদায়াতের মশালধারী- সে বিবেচনার ভার নিরপেক্ষ ও হকতলবি পাঠকদের উপর ন্যস্ত করলাম। এ ব্যাপারে আমি কথা বাড়াতে চাই না।


দ্বিতীয় পারচাটি, যেটিতে জিহাদ ও মুজাহিদিনের নকদ করা হয়েছে, সেটি ষোল পৃষ্ঠার। সেটিতে আবুল হাসান আব্দুল্লাহ সাহেব ও আব্দুল মালেক সাহেব উভয়ের দস্তখত আছে। তারিখ: ২১ রজব, ১৪৪০ হি.। শিরোনাম (উর্দুতে): ‘আপনে তলবায়ে কেরাম সে চান্দ জরুরী গুজারেশাত’।

পারচাটি দেখার পর বেশ কষ্ট পেয়েছি। অবশ্য খুব বেশি পাইনি। কারণ, বড়দের থেকে এ ধরণের কষ্ট পাওয়ার সিলসিলা নতুন কিছু নয়। স্বয়ং নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম) যাদের থেকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন, তারা সমাজের বড়রাই।

বললে অত্যুক্তি হবে না যে, পারচাতে মুজাহিদিনে কেরামের ব্যাপারে যেসব কথা বলা হয়েছে, চরমপন্থী কিছু খারিজির ব্যাপারে সেগুলো প্রযোজ্য হলেও বাকিসকল হকপন্থী মুজাহিদের উপর তুহমত ও অপবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। মারকাযের বড়দের থেকে এ ধরণের বড় বড় ও বাস্তবপরিপন্থী তুহমতের একটা বড় কারণ এও যে, জিহাদ ও মুজাহিদিনের বাস্তব অবস্থা, জিহাদের ময়দানের সঠিক দৃশ্য, কুফরি ও তাগুতি শাসনের স্বরূপ এবং ইসলাম, মুসলমান এবং জিহাদ ও মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মারকাযের যথাযথ জ্ঞান নেই। অবশ্য তখন প্রশ্ন আসবে যে, বাস্তব অবস্থা জানা না থাকলে তারা কেন মন্তব্য করতে গেলেন? এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।

হকপন্থী মুজাহিদিনে কেরাম সম্পর্কে যাদের বাস্তব জানাশুনা আছে, তাদের কাছে মারকাযের এসব তুহমতের বাতুলতা তুলে ধরার কোন প্রয়োজন নেই। অবশ্য যারা জানেনা, তাদের কাছে বড়দের থেকে বের হওয়া এসব অপবাদই সত্য মনে হবে। তাদের সামনে মুজাহিদিনে কেরামের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা দাঈ ভাইদের অপরিহার্য কর্তব্য।
এ গেল একটা দিক। এ ব্যাপারে আমি কথা বাড়াতে চাই না।

মারকাযের নকদের আরেকটা দিক হল, জিহাদ সংক্রান্ত কতক শরয়ী বিষয়। যেমন- তাকফিরুত তাওয়াগিত, দারুল হরব, ফরিজায়ে জিহাদ ইত্যাদি। এ সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয়ের তারা নকদ করেছেন। অবশ্য বললে অত্যুক্তি হবে না যে, বাস্তব ময়দানের ব্যাপারে যেমন যথেষ্ট অজানা রয়েছে; জিহাদ, কিতাল ও সিয়ার সংক্রান্ত বিষয়ে শরয়ী ইলমের কমতিও তাদের একেবারে কম নয়।

অনেকে অবশ্য রেগে উঠবে যে, আপনারা কি আব্দুল মালেক সাহেবদের চেয়েও বেশি বুঝেন? উত্তরে *শুধু এতটুকু বলবো, আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন, হুবহু এই প্রশ্নটাই করা হয়েছে নবীগণকে (আলাইহিমুস সালাম)। নবীদের তারা বলতো, তোমরা কি আমাদের বাপ-দাদাদের চেয়েও বেশি বুঝ? বাপ-দাদা আর বড়দের এই অন্ধভক্তির কারণেই দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ কুফরের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে নবুওতের হিদায়াতে আসতে পারেনি। এজন্য এ ধরণের রাগ না দেখানোর আবেদন। এগুলো শরীয়তের কোন দলীল নয়। শরীয়তের দলীল কুরআন-সু্ন্নাহ। সকলের মন্তব্য এই কুরআন সুন্নাহ মতে যাচাই করে দেখার অনুরোধ।

মারকায বেশ কয়েকটি বিষয়ে মুজাহিদিনে কেরামকে ভ্রান্ত মনে করে-

ক. কুফরি আইন দিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনাকারী শাসকরা কাফের।
খ. কুফরি আইন দিয়ে পরিচালিত রাষ্ট্রগুলো দারুল হরব।
গ. এসব মুরতাদ শাসক কতৃক প্রদত্ত ভিসা আমান নয়। বিধায় ভিসা নিয়ে আসা হরবি কাফেরদের হত্যা করা যাবে।
ঘ. বর্তমানে নামায-রোযার মতো জিহাদ প্রত্যেকের উপর ফরয। প্রত্যেককেই নিজ নিজ ফরিজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
ঙ. জিহাদ ফরয (বা সহীহ) হওয়ার জন্য ইসলামী ইমারা কায়েম থাকা বা আমীরুল মু’মিনীন বিদ্যমান থাকা বা আমীরুল মুমিনীনের অনুমতি শর্ত নয়। ইমাম থাকলে যেমন জিহাদ ফরয, ইমাম না থাকলেও জিহাদ ফরয।
মোটামুটি এগুলো মৌলিক পয়েন্ট। যতটুকু বুঝতে পারলাম, মারকাযের অভিমত হলো-
ক. কুফরি আইন দিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনাকারী শাসকরা কাফের নয়।
খ. কুফরি আইন দিয়ে পরিচালিত রাষ্ট্রগুলো দারুল হরব নয়।
গ. এসব শাসক কতৃক প্রদত্ত ভিসা আমান। বিধায় ভিসা নিয়ে আসা হরবি কাফেরদের হত্যা করা যাবে না।
ঘ. নামায-রোযার মতো জিহাদ প্রত্যেকের উপর ফরয নয়। প্রত্যেককেই নিজ নিজ ফরিজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে তাও নয়। বরং জিহাদ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।
ঙ. জিহাদ ফরয (বা সহীহ) হওয়ার জন্য শক্তিধর ইসলামী ইমারা, আমীরুল মু’মিনীন এবং আমীরুল মুমিনীনের অনুমতি শর্ত। আমীরুল মু’মিনীন না থাকলে ফরয নয়।

আমীরুল মু’মিনীন না থাকলে আগে জিহাদ ব্যতীত ভিন্ন পদ্ধতিতে আমীরুল মু’মিনীন ও ইমারত কায়েম করতে হবে। এরপর আমীরুল মু’মিনীনের অনুমতি হলে তখন জিহাদ করা যাবে; অন্যথায় নয়।

এসব বিষয় নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। ক-খ-গ এ তিনটি বিষয়ের ভিত্তি এর উপর যে, শরীয়ত প্রত্যাখান করে কুফরি জীবনব্যবস্থা দিয়ে শাসনকারী তাগুতরা কাফের কি কাফের না? যদি কাফের হয়, তখন রাষ্ট্র দারুল হরব হবে এবং এদের প্রদত্ত ভিসারও কোন মূল্য থাকবে না। এ বিষয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। এ ব্যাপারে আর নতুন করে লিখতে চাচ্ছি না। তবে শুধু আল্লামা শানকিতি রহ. এর একটি মন্তব্য তুলে ধরতে চাই। তিনি বলেন,
ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺘﺒﻌﻮﻥ ﺍﻟﻘﻮﺍﻧﻴﻦ ﺍﻟﻮﺿﻌﻴﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﺷﺮﻋﻬﺎ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﺃﻟﺴﻨﺔ ﺃﻭﻟﻴﺎﺋﻪ ﻣﺨﺎﻟﻔﺔ ﻟﻤﺎ ﺷﺮﻋﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺟﻞ ﻭﻋﻼ ﻋﻠﻰ ﺃﻟﺴﻨﺔ ﺭﺳﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﺳﻠﻢ، ﺃﻧﻪ ﻻ ﻳﺸﻚ ﻓﻲ ﻛﻔﺮﻫﻢ ﻭﺷﺮﻛﻬﻢ ﺇﻻ ﻣﻦ ﻃﻤﺲ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﺼﻴﺮﺗﻪ، ﻭﺃﻋﻤﺎﻩ ﻋﻦ ﻧﻮﺭ ﺍﻟﻮﺣﻲ ﻣﺜﻠﻬﻢ . ﺍﻫـ

“আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা তার রাসূলগণ সাল্লাল্লাহু আলাইহিম ওয়াসাল্লামের যবানে যেসকল বিধি বিধান দান করেছেন, সেগুলোর বিপরীতে শয়তান তার দোস্তদের দ্বারা যেসকল (কুফরি) বিধি বিধান প্রণয়ন করেছে, সেসবের অনুসরণ যারা করে; তাদের কাফের ও মুশরিক হওয়ার ব্যাপারে কেবল তারাই সন্দেহ করতে পারে, এদের মতোই আল্লাহ তাআলা যাদের অন্তর্দৃষ্টি নিভিয়ে দিয়েছেন এবং ওহীর নূর থেকে অন্ধ করে দিয়েছেন।”- আদওয়াউল বায়ান ৩/২৫৯

শেষ দু’টি বিষয়ের মূলকথা কাছাকাছি। তা হলো, ‘ইমাম ছাড়া জিহাদ ফরয নয়। শুধু তাই নয়, জিহাদ সহীহও নয় এবং কোন সওয়াবের কাজও নয়’। বরং গুনাহের কাজ।
মারকাযের বক্তব্য দেখুন (বাংলা তরজমা)-

“ফরিজায়ে জিহাদ যিন্দা করার ফিতরি (তথা স্বাভাবিক) ত্বরিকা হলো, প্রথমে তামাক্কুন ফিল আরদ (তথা রাষ্ট্রক্ষমতা) হাসিল হবে এবং প্রভূত শক্তিধর ইসলামী ইমারা কায়েম হবে। আমীরুল মু’মিনীন আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকারের অন্যান্য শুবা (তথা শাখা)-এর ন্যায় জিহাদকেও ইসলামী আহকাম অনুযায়ী যিন্দা করবেন।”- চান্দ গুজারেশ, পৃষ্ঠা ৯

এখানে হাশিয়াতে লিখা হয়েছে, “ইমাম ইবনুল মুবারকের ‘কিতাবুল জিহাদ’-এর বাংলা তরজামায় মুকাদ্দামার একেবারে শেষে যা বলা হয়েছে যে, ‘এ প্রশ্নের জওয়াব সায়্যিদ আহমাদ শহীদের জীবনীতে মিলবে’ এর দ্বারা জিহাদের এই ফিতরি ত্বরিকার প্রতিই ঈঙ্গিত করা হয়েছে।”- চান্দ গুজারেশাত, পৃষ্ঠা ৯
আরো বলেন, “তামাক্কুন ফিল আরদ, হাকিকি ইস্তিতাআত (তথা বাস্তবিক সামর্থ্য)- কাল্পনিক সামর্থ্য নয়- এবং প্রভূত শক্তিধর ইমারার ইজাযত (অনুমতি) ও নেগারনি ব্যতীত জিহাদ করতে যাওয়া ঐ ত্বরিকা নয়, যাকে সুন্নতে নববী ও উসূলে-শরঈয়্যা-সম্মত ত্বরীকা বলা যায়। বিশেষত যদি ঐ ত্বরিকা স্বয়ং নিজেই মুনকার এবং শরীয়ত বিরোধী কোন কিছু ধারণকারী হয় …।”- চান্দ গুজারেশাত, পৃষ্ঠা ৯

সামনে বলেন, “জিহাদের ফিতরি ত্বরিকায় যেহেতু স্বাভাবিক অনেক দীর্ঘ সময় ও দীর্ঘ মেহনতের দরকার পড়বে এবং ব্যাপকভাবে যেহেতু এ ব্যাপারে শিথিলতা ও অবহেলা দেখা যাচ্ছে, তাই কিছু লোক এর জন্য কিছু মুখতাসার (সংক্ষিপ্ত) ত্বরিকা আবিষ্কার করেছে এবং এগুলোকেই জিহাদ নাম দিয়ে দিয়েছে।”- চান্দ গুজারেশাত, পৃষ্ঠা ৯-১০

সামনে বলেন, “এমনিভাবে জিহাদের নব উদ্ভাবিত এবং মুখতাসার ত্বরিকা আবিষ্কারকারীদের কারো কারো মতে জিহাদ প্রত্যেক মুমিনের উপর আলাদা আলাদা ফরয। প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতভাবে এর যিম্মাদার। এর জন্য আমীরুল মু’মিনীনের ইজাযত শর্ত নয়।” – চান্দ গুজারেশাত, পৃষ্ঠা ১০
সামনে বলেন, “তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে, ‘এখন জিহাদের বিধান বাস্তবায়ন করার সামর্থ্যও বিদ্যমান আছে’। এটিও তো এক আজীব (আশ্চর্য) মুআমালা যে, জিহাদের সামর্থ্য আছে কিন্তু খেলাফত কায়েমের সামর্থ্য নেই?! চিন্তা করার দরকার যে, যদি তোমাদের আমীরের জিহাদের সামর্থ্য থাকতো, তাহলে সে তোমাদের ঐ রাষ্ট্রে খেলাফতে ইসলামীয়াও কায়েম করতে পারতো!”- চান্দ গুজারেশাত, পৃষ্ঠা ১০-১১

এ হল মারকাজের বক্তব্য।

*পুরো বক্তব্যের সারকথা: শক্তিধর ইসলামী ইমারত কায়েম করে, আমীরুল মুমিনীন নিয়োগ দিয়ে তারপর আমীরুল মুমিনীনের অনুমতি ও নেগারনিতে যে জিহাদ হবে, সেটিই একমাত্র শরীয়তসম্মত জিহাদ। এছাড়া জিহাদের শরীয়তসম্মত কোন ত্বরিকা নেই। অন্য সকল ত্বরিকা নব আবিষ্কৃত ও শরীয়তপরিপন্থী। এগুলোকে জিহাদ বলা যাবে না।

আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হয় যে, সামজের রাহবার বলে যারা পরিচিত, তাদের মধ্যেই এ ধরণের জঘন্য রকমের আকীদা বিদ্যমান, কুরআন-সুন্নাহ ও আইম্মায়ে উম্মতের বক্তব্যে যার দূরতম ঈশারা-ঈঙ্গিতও নেই। বরং- আপনারা অনেকে হয়তো জেনে থাকবেন- এ ধরণের জঘন্য আকীদা শীয়ারা লালন করে। শীয়াদেরই আকীদা এমন যে, ইমাম ছাড়া জিহাদ নেই। গায়েব থেকে ইমাম আসার অপেক্ষায় তারা আছে। অবশ্য শীয়ারাও যখন বুঝতে পারলো যে, এ আকীদা একান্তই গলদ, তখন তারাও এ আকীদার বিপরীতে খোমেনীর নেতৃত্বে যুদ্ধে নেমেছে। এ ধরণের সংশয় আসলে খণ্ডনের যোগ্য নয়, তথাপি আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এগুলোর পেছনে সময় নষ্ট করতে হচ্ছে। হে আল্লাহ আমাদের উদ্ধার কর!

মারকাযের কাছে আমার প্রশ্ন

বর্তমান বিশ্বে যেসব ভূমিতে মুসলমানরা নির্মম নির্যাতনের শিকার- যেমন, আরাকান, কাশ্মীর ইত্যাদি- সেগুলোর মুসলমানরা যদি আগ্রাসী কাফেরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাহলে কি তা হারাম হবে? শক্তিধর ইমারত ও আমীরুল মু’মিনীন না থাকায় কি তাদের রুখে দাঁড়ানো হারাম হবে?
যদি উত্তর হয় যে, হারাম হবে না; তাদের রুখে দাঁড়ানো জায়েয হবে- তাহলে আপনাদের মূলনীতি টিকলো না যে, শক্তিধর ইমারত ও আমীরুল মু’মিনীন ছাড়া জিহাদ জায়েয নয়।

আর যদি উত্তর হয় যে, না তাদের রুখে দাঁড়ানো হারাম হবে- তাহলে এর স্বপক্ষে কুরআন হাদিসের কোন একটা দলীল বা আইম্মায়ে কেরামের কোন একটা বক্তব্য উপস্থিত করার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। তবে আমি ইনশাআল্লাহ কসম করে বলতে পারি, মারকাযের বড়-ছোট এবং সকল ফুজালা মিলে কেয়ামত পর্যন্ত খোঁজাখুজি করেও কোন একটা দলীল বা কোন একটা বক্তব্য উদ্ধার করতে পারবে না। নাউজুবিল্লাহ! বরং আইম্মায়ে কেরাম এ ধরণের পরিস্থিতিতে জিহাদ ফরযে আইন হওয়া অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেছেন।

দ্বিতীয়ত, মারকায বলেছে, প্রথমে শক্তিধর ইমারত কায়েম করতে হবে তারপর জিহাদ করতে হবে। এও বলেছে যে, ইমারত কায়েম করতে দীর্ঘ সময় ও অনেক মেহনত দরকার। মারকাযের কাছে আবেদন, সে দীর্ঘ মেয়াদী ও দীর্ঘ মেহনতের ত্বরিকাটি কোনটি আমাদের বাতলিয়ে দিন। শরীয়তের দলীলের আলোকে যাচাই করে দেখি যে, কোন সে ত্বরিকা যা মারকাযের বড়রা বুঝতে পারলো, আর সারা দুনিয়ার হাজারো লাখো মুজাহিদ ও মাশায়েখ বুঝতে পারলো না।

তৃতীয়ত, জিহাদের জন্য ইমারত লাগবে, আমীরুল মু’মিনীন লাগবে। প্রশ্ন করি, আপনাদের কি ইমারত ও আমীরুল মু’মিনীন নেই? পঞ্চাশেরও বেশি মুসলিম রাষ্ট্র; তাদের রাষ্ট্রপ্রধান- সেগুলো কি? এরা কি আপনাদের আমীরুল মুমিনীন নয়? এসব রাষ্ট্র কি ইমারত নয়? এদের তো সবই আছে। বাহিনী আছে, অস্ত্র আছে, জিহাদের সামর্থ্য আছে। তাহলে কি তারা আমীরুল মুমিনীন নয়?

যদি বলেন, না! তারা আমীরুল মুমিনীন নয়- তাহলে কেন? তারা কি আপনাদের মতে মুসলমান নয়? তারা কি ক্ষমতার মালিক নয়? আপনাদের তো জানা থাকার কথা যে, কোনো মুসলমান অস্ত্র বলে ক্ষমতা দখল করলেও সে আমীরুল মুমিনীন হয়ে যায়। তার সাথে মিলে জিহাদ করতে হয়। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা- রাজেহ ক্বওল মতে- নাজয়েয। এটা আহলে সুন্নাহর আকীদা। আকীদার সব কিতাবে কথাটা আছে। তাহলে তারা কেন আমীরুল *মুমিনীন নয়? কেন তাদের রাষ্ট্রগুলো ইমারত নয়? খেলাফতে রাশেদার পর থেকে ১২/১৩শো বছর তো এভাবে জবর দখলের খেলাফতই ছিল। তারা যদি আমীরুল মুমিনীন হয়ে থাকেন, তাদের সাথে মিলে যদি জিহাদ ফরয হয়ে থাকে, তাহলে এদের কি সমস্যা? তখন জালেম শাসকের সাথে মিলে জিহাদ করা ফরয ছিল, তাহলে আজ কিভাবে সে ফরয রহিত হয়ে গেল? আপনাদের মতো পরিস্থিতি তো একই, তাহলে হুকুম কেন ভিন্ন?

আর যদি বলেন, তারা আমীরুল মুমিনীন- তাহলে আমীরুল মুমিনীন নিয়োগ দিতে হবে, ইমারত কায়েম করতে হবে, নতুবা জিহাদ করা যাবে না: এসব কথার কি অর্থ? আমীরও আছে, ইমারতও আছে- তাহলে জিহাদ ফরয হচ্ছে না কেন?

উত্তরে হয়তো বলবেন, আমীর সাহেব-সাহেবাগণ জিহাদ করতে দিচ্ছেন না। তাহলে প্রশ্ন করি, কোন জিহাদ করতে দিচ্ছেন না? ফরযে কিফায়া না ফরযে আইন? যদি ফরযে আইন থেকে বাধা দেয়, তাহলে তো ফিকহের কিতাবে পরিষ্কারই লিখা আছে যে, আল্লাহর আদেশ ফরযে আইন কোন মাখলুখের বাধার কারণে ছাড়া যাবে না। ইমামের আদেশ অমান্য করে হলেও জিহাদ করতে হবে। আর যদি ফরযে কিফায়া থেকে বাধা দেয়, তাহলেও ফিকহের কিতাবে পরিষ্কার আছে যে, এমন ধরণের ইমামের অনুমতির কোন পরোয়া না করে মুসলমানগণ নিজেরাই জিহাদ করবে। বরং কিতাবাদিতে তো এও পরিষ্কার আছে যে, ইমাম যদি না থাকে, তথাপি জিহাদ মাফ নেই। ইমাম না থাকলেও জিহাদ করে যেতে হবে। ইমাম নেই বাহানায় বসে থাকার সুযোগ নেই। এরপরও বুঝতে পারছি না, আপনারা কোন বাহানা ধরে জিহাদ ফরয নয়, করা যাবে না, ফিতরি ত্বরিকা হচ্ছে না- ইত্যাদি বলে যাচ্ছেন।

এসব ব্যাপারে আগেও লিখা হয়েছে। এখন আর লিখতে চাচ্ছি না। মারকাযের কাছে আবেদন থাকবে, আমার জিজ্ঞাসালোর দলীলভিত্তিক জওয়াব দেয়ার।
দাঈ ভাইদের সুবিধার জন্য এখানে কয়েকটি মাকালার লিংক (পিডিএফ) দিয়ে দিচ্ছি-

১. ইমাম ছাড়া জিহাদ:
https://my.pcloud.com/publink/show?c…9e1rKFb
BOLyxX7
২. ইমামের অনুপস্থিতিতে জিহাদী তানজীম:
https://my.pcloud.com/publink/show?c…LBU5kD3
JBBgobV
২. একাকী জিহাদ- দলীল প্রমাণ:
https://my.pcloud.com/publink/show?c…VKJzThy

 


মূলঃ ইলম ও জিহাদ ভাই

2 thoughts on “জিহাদ নিয়ে মারকাযুদ দাওয়াহ এর বিভ্রান্তির নিরসন

Add yours

    1. লেখক মূল লেখাতে যে দুইটি পার্চার কথা বলেছেন, দলিলের জন্য দয়া করে সেই পার্চা দুইটি সংগ্রহ করুন। পার্চা দুইটি উর্দুতে লেখা এবং তিনার ছাত্রদের উদ্দেশ্যে দেয়া যা পরবর্তীতে পাবলিকলি ছড়িয়ে পড়ে এবং জিহাদ সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

Website Powered by WordPress.com.

Up ↑

Design a site like this with WordPress.com
শুরু করুন